স্বদেশ ডেস্ক:
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগের গতি কোন দিকে যাচ্ছে তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। আলোচিত এ সংগঠনের নেতৃত্ব বুড়োদের হাতেই থাকছে নাকি তরুণদের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে তা নিয়ে এখনো অন্ধকারে নেতাকর্মীরা। ক্যাসিনো-কাণ্ডে লণ্ডভণ্ড যুবলীগের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে আজ সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে বসছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ বৈঠক থেকেই প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবেন তিনি।
সূত্র জানায়, যুবলীগের আসন্ন কংগ্রেসে সভাপতিত্ব কে করবেন, সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক কে হবেন, সে বিষয়গুলো আওয়ামী লীগ সভাপতির সাথে আজকের বৈঠকের পরই চূড়ান্ত হবে। কংগ্রেসে বর্তমান চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীকে রাখা হবে না বলে ইতোমধ্যে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদকে জানিয়ে দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সে ক্ষেত্রে যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শহীদ সেরনিয়াবাত, মুজিবুর রহমান চৌধুরী অথবা সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদকে কংগ্রেসে সভাপতিত্ব করার দায়িত্ব দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
জানতে চাইলে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘আগামী ২৩ নভেম্বর যুবলীগের ষষ্ঠ জাতীয় কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রী রোববার বিকেল ৫টায় আমাদের সাথে গণভবনে বসবেন। সেখানে কংগ্রেস সম্পন্ন করতে আমাদের যে সমস্যা ও সঙ্কট আছে সেগুলোর সমাধান হবে।’
আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা জানান, যুবলীগের চেয়ারম্যান, সাধারণ সম্পাদক ও প্রেসিডিয়াম সদস্যদের বেশির ভাগই এবারের কংগ্রেসের মাধ্যমে বাদ পড়বেন। সে ক্ষেত্রে ক্যাসিনো, জুয়া, টেন্ডারবাজি, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মের দায়ে সমালোচিত সংগঠনটির ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনতে সক্ষম, মেধাবী, দক্ষ ও পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির নেতাদের নিয়ে যুবলীগের আগামী কমিটি গঠন করা হবে। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কঠোর অবস্থানে রয়েছেন।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে যুবলীগের কিছু নেতাকর্মীর বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে সংগঠনের ইমেজ নষ্ট হয়েছে। সে জন্য যারা যুবলীগের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারে সক্ষম এমন যোগ্য নেতাদেরই নেতৃত্বে আনা হবে। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনড়। আজকের বৈঠকে তিনি যুবলীগ নেতাদের সে বার্তাই দেবেন।’
আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের সূত্রগুলো জানায়, যুবলীগে বয়সসীমা বেঁধে দেয়ার বিষয়টি নিয়ে এখনো ধোঁয়াশা কাটেনি। বয়সসীমা নিয়ে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের মধ্যেই দু’টি ধারা বিরাজ করছে। একটি অংশ মনে করছেন সিনিয়রদের ত্যাগ, অতীত রাজনীতি ও অভিজ্ঞতা রয়েছে। সে জন্য এ সংগঠনের হারানো ইমেজ উদ্ধারে তাদের হাতেই সংগঠনের দায়িত্ব দেয়া উচিত। সে জন্য কোনো বয়সসীমা বেঁধে দেয়া উচিত হবে না। আরেকটি অংশ মনে করছে, একটি যুব সংগঠনের দায়িত্ব যুবকদের হাতেই থাকা উচিত। ৭০ ঊর্ধ্ব কোনো বুড়োর হাতে নয়। আর বুড়োদের হাতে দায়িত্ব থাকায় এ সংগঠনের বদনাম হয়েছে। সে জন্য এবারের কংগ্রেসের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট বয়সসীমা দিয়ে যুবকদের হাতে নেতৃত্ব তুলে দেয়া উচিত। তবে আরেকটি অংশের মতে, সংগঠনের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা ও তারুণ্য দু’টিই প্রয়োজন রয়েছে। সে জন্য নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে কমিটি হওয়া উচিত।
এ দিকে বয়স নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব থাকায় চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক পদ পেতে নেতাদের দৌড়ঝাঁপের কমতি নেই। তারা প্রতিদিনই দলীয় কার্যালয় এবং আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের বাসা ও ব্যবসায়িক কার্যালয়ে ধর্ণা দিচ্ছেন। যে যার মতো করে গুরুত্বপূর্ণ পকেটগুলোতে যোগাযোগ রক্ষা করছেন। কর্মী এবং মিডিয়ার সাথেও যোগাযোগ বাড়িয়েছেন তারা। পাশাপাশি পছন্দের নেতার পক্ষে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন সমর্থকরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, যুবলীগের নেতাদের বয়সসীমা কত হবে তার ওপর নির্ভর করবে আগামী কমিটিতে কারা নেতৃত্ব দেবেন। কারণ, বর্তমান কমিটির দক্ষ ও ত্যাগী নেতাদের প্রায় সবারই বয়স ৫০ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে। বয়সসীমা ৬০ বছরের মধ্যে হলে বর্তমান কমিটির গুরুত্বপূর্ণ নেতারা চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক পদে আসার সুযোগ পাবেন। আর যদি বয়সসীমা ৪৫ বছর বেঁধে দেয়া হয়, তবে ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের ভাগ্য খুলে যাবে। সে ক্ষেত্রে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের মধ্য থেকে যুবলীগের চেয়ারম্যান কিংবা সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এ ছাড়া কমিটির অন্য পদেও ঠাঁই পেতে পারেন নবীনরা। তবে আজ প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈঠকের পরই বয়স নিয়ে ধোঁয়াশা কেটে যাবে।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘যুবলীগের বয়সসীমা কী হবে সেটি গণভবনের বৈঠক থেকে স্পষ্ট হয়ে যাবে’।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমান কমিটির নেতাদের মধ্যে যুবলীগের চেয়ারম্যান পদ পেতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন সংগঠনটির প্রেসিডিয়াম সদস্য শহীদ সেরনিয়াবাত, মাহবুবুর রহমান হিরণ, অ্যাডভোকেট বেলাল হোসাইন, মুজিবুর রহমান চৌধুরী, ফারুক হোসেনসহ আরো কয়েকজন। তারা বিভিন্ন মাধ্যমে জোর লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মির্জা আজমকে সংগঠনটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেয়ার বিষয়টিও জোর আলোচানা হচ্ছে। অন্য দিকে যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও শেখ ফজলুল হক মনির ভাই শেখ ফজলুর রহমান মারুফকে যুবলীগের চেয়ারম্যান করতে আগ্রহী আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একটি অংশ। আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এবার শেখ ফজলুল হক মনির ছেলে শেখ ফজলে শামস পরশ অথবা শেখ ফজলে নূর তাপসকে যুবলীগ চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দিতে পারেন। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের অনেকেই শেখ পরশ বা শেখ তাপসকে যুবলীগের চেয়ারম্যান করার পক্ষে।